বাংলাদেশে বহু ছোট ছোট নৃগোষ্ঠী বসবাস করে, যারা নিজেদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের ধর্মীয় উৎসবগুলো কেবল আনন্দের উৎস নয়, বরং তাদের পরিচয়, ঐতিহ্য ও সমাজগত বন্ধন রক্ষার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনের কিছু উগ্র সদস্যদের কারণে এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ধর্মীয় উৎসবগুলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বা সম্পূর্ণরূপে বানচাল হচ্ছে। এই বিষয়টি সমাজে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর ধর্মীয় উৎসব সাধারণত নিরীহ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপিত হয়। তারা তাদের নিজস্ব প্রথা ও রীতি মেনে এগুলো পালন করে থাকে। কিন্তু কিছু ইসলামিক সংগঠনের সদস্যরা এসব উৎসবে বাধা সৃষ্টি করে আসছেন। তাঁদের একাংশ মনে করে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ইসলামিক বিধান ও বিশ্বাসের পরিপন্থী। তাই তারা এসব উৎসব বন্ধ করার চেষ্টা চালায়। কখনও কখনও তারা হুমকি-ধমকি দিয়ে বা সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে নৃগোষ্ঠীদের উৎসব পালনকে বাধাগ্রস্ত করেন। এতে করে ঐ নৃগোষ্ঠীগুলো মানসিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
আরেকটি সমস্যা হলো, ইসলামিক সংগঠনের কিছু সদস্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসবকে অবৈধ বা প্রাচীন কুসংস্কার হিসেবে প্রদর্শন করে। তারা এসব উৎসবের মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রতা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর সুযোগ নেন, যা সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে। এর ফলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর ঐতিহ্যগত অনুষ্ঠানগুলো হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
অবশ্যই এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ঐতিহ্য রক্ষায় সরকার ও সমাজের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। ইসলামিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দেরও উচিত, ধর্মের নামে সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট না করে, নৃগোষ্ঠীগুলোর উৎসবগুলোকে সম্মান জানানো ও সংরক্ষণে কাজ করা।
সবশেষে বলা যায়, ধর্মীয় উৎসব কেবল আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান নয়, এটি মানুষের সাংস্কৃতিক পরিচয় ও ঐক্যের প্রতীক। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উৎসব বানচাল করার বদলে, এগুলোকে সম্মান করার মাধ্যমে আমরা একটি সমন্বিত ও সহিষ্ণু সমাজ গড়তে পারি।