July 15, 2025

Banner Image

বিচিন্তা

অদেখা মানুষ: হিজড়াসমাজকে অবহেলার চোখে দেখা কবে শেষ হবে?

বাংলাদেশে যখনই “হিজড়া” শব্দটি উচ্চারিত হয়, অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেয়, কেউ হাসে, কেউ করুণা করে, আর বেশিরভাগই অস্বস্তি অনুভব করে। এই প্রতিক্রিয়া আসলে একটি গভীর সামাজিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি—যেখানে মানুষকে শুধুমাত্র তাদের লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে আলাদা করে ফেলা হয়, এবং সমাজের মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

হিজড়াদের প্রতি অবহেলা বা বিদ্বেষের শুরুটা ঘটে পরিবার থেকেই। অধিকাংশ হিজড়া সন্তানকে পরিবার ত্যাগ করে, লুকিয়ে ফেলে বা সমাজের চোখে “কলঙ্ক” ভেবে দূরে সরিয়ে রাখে। এই নির্যাতনের শুরুটা যখন সবচেয়ে কাছের মানুষের হাত থেকেই হয়, তখন সমাজের কাছে ন্যায়বিচার চাওয়াটা কেমন করে সম্ভব?

বাংলাদেশে হিজড়ারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। স্কুল-কলেজে বৈষম্য, কটুক্তি, এমনকি নিপীড়নের শিকার হন তারা। ফলত, অধিকাংশ হিজড়াই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকে। এর ফলে কর্মজীবনে প্রবেশের সুযোগও হাতছাড়া হয়। বাধ্য হয়েই তারা ভিক্ষাবৃত্তি, নাচ-গান বা যৌন পেশার মতো কাজে জড়িয়ে পড়ে।

২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও বাস্তবতা এখনো সেই কাগজেই সীমাবদ্ধ। পরিচয়পত্রে ‘হিজড়া’ লেখার সুযোগ থাকলেও, চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তা হয়ে দাঁড়ায় আরও একটি বাধা। সরকারী-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো হিজড়াদের জন্য গ্রহণযোগ্য পরিবেশ গড়ে ওঠেনি।

হিজড়াদের নিয়ে সমাজে চলে নানা কুসংস্কার। কেউ ভাবে তারা অভিশপ্ত, কেউ মনে করে তারা অশুভ। এই মনোভাব শুধু অবমাননাকর নয়, বরং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। হিজড়ারা যেমন হাসে, কাঁদে, ভালোবাসে—তেমনি তাদেরও স্বপ্ন আছে, আত্মসম্মান আছে। কিন্তু আমরা কি কখনো সেটার প্রতি সম্মান দেখাই?

হিজড়াসমাজের প্রতি অবহেলার দৃষ্টিভঙ্গি শুধরাতে হলে দরকার শিক্ষা, সচেতনতা এবং সদিচ্ছা। হিজড়াদের প্রতি সহমর্মিতা নয়—সমতা চাই। প্রয়োজন তাদেরকে প্রকৃত অর্থে নাগরিক অধিকার দেওয়া, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে সমান সুযোগ সৃষ্টি করা, এবং সমাজে তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা।
এই অবহেলিত মানুষগুলো যেন সমাজের ‘অদেখা মানুষ’ হয়ে না থাকে। তাদেরও স্বপ্ন আছে, ঠিক আমাদের মতো। প্রশ্ন হলো, আমরা কবে নাগাদ মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে শিখবো?

Share: Facebook Twitter Linkedin
Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *