July 15, 2025

Banner Image

বিচিন্তা

নোংরা রাজনীতির বাংলাদেশ: আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত ও শিবিরের ক্ষমতার খেলাঘর

বাংলাদেশের রাজনীতি, বিশেষ করে ক্ষমতাকেন্দ্রিক দলগুলোর আচরণ, আজ যেন এক দুঃস্বপ্নের নাম। এই দেশ এক সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর আমরা দেখছি—এখানে গণতন্ত্র নেই, নৈতিকতা নেই, শুধু আছে হিংসা, ষড়যন্ত্র আর ক্ষমতার জন্য মরিয়া কিছু রাজনৈতিক দল।

এই ব্লগে আলোচনা করবো চারটি প্রধান রাজনৈতিক শক্তির কথা—আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ও তাদের ছাত্রসংগঠন শিবির। এদের ইতিহাস, চরিত্র, ষড়যন্ত্র এবং জনগণের সাথে প্রতারণার ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণ করবো বাস্তব ঘটনার আলোকে।

আওয়ামী লীগ: মুক্তিযুদ্ধের দল থেকে একনায়কত্বের পথে

আওয়ামী লীগ একসময় ছিল আমাদের মুক্তির প্রতীক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দল বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দেয়। কিন্তু আজ এই দলই গণতন্ত্রের কবর রচনা করছে।

ঘটনা: ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন—যেখানে বিরোধী দলকে মাঠেই নামতে দেওয়া হয়নি, ভোটার ছাড়া ভোট হয়ে গেছে। শত শত কেন্দ্র ছিল “কেন্দ্র দখল করা”, আগেই ব্যালট পূর্ণ হয়ে যাওয়া বা ভোটারদের মারধর করে বের করে দেওয়া—এমন ঘটনাবলী দেশের মানুষের চোখে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

দলীয়করণ ও দুর্নীতি: বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ—সব কিছু এখন দলীয় নিয়ন্ত্রণে। তরুণ প্রজন্ম যখন বলে, “বাড়ি বানাতে হলে আওয়ামী লীগ করতে হয়”—তখন বোঝা যায় কী গভীরে গিয়েছে অনৈতিকতা।

বিএনপি: ক্ষমতার জন্য জন্ম, সুবিধাবাদীতার প্রতিচ্ছবি

বিএনপি প্রতিষ্ঠিতই হয়েছিল সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের হাতে। শুরু থেকেই দলটি আদর্শহীনভাবে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া থেকেছে। এই দল ক্ষমতায় এলেই গড়ে ওঠে চোরাকারবার, জঙ্গি মদদ, প্রশাসনিক দুর্নীতি।

ঘটনা: ২০০১-২০০৬ সাল—এই সময় ছিল বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় দুর্নীতির যুগ। তারেক রহমানের হাওয়া ভবন থেকে পরিচালিত হতো নিয়োগ, বরাদ্দ ও উন্নয়ন কার্যক্রম। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায় বিএনপির ঘাড়েই বর্তায়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবরকে সেই হামলার সময় ‘কভার আপ’ করতে দেখা যায়।

ভোটের রাজনীতি: বিএনপি নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে বারবার বলে “ভোট চুরি হয়েছে”—কিন্তু জনগণের কাছে তাদের কোনো ভিশন নেই, শুধু শেখ হাসিনাকে সরানোর ন্যাকা কৌশল।

জামায়াতে ইসলামী ও শিবির: ধর্মের লেবাসে বিশ্বাসঘাতকতা ও সহিংসতা

জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানভক্ত, একাত্তরে যারা গণহত্যা চালিয়েছে—তাদের অনেকে এখনো রাজনীতিতে সক্রিয়। দলটি কখনো বিএনপির ছায়াতলে, কখনো গোপনে রাষ্ট্রযন্ত্রে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে যাচ্ছে।

ঘটনা: ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার—যেখানে জামায়াত ও হেফাজত গঠন করে মৌলবাদকে উস্কে দিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় দেশে চালিয়েছিল পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, রেললাইন ধ্বংস, স্কুলে আগুন লাগানো ইত্যাদি নৃশংস কার্যকলাপ।

শিবিরের ভূমিকা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তারা বিভাজন সৃষ্টি করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্ত্র ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিকে ভয়ংকর রূপ দেয়।

জনগণের মূল্য কী?

এই চারটি শক্তি আসলে জনগণকে ব্যবহার করে শুধু নিজের ক্ষমতা চায়। তাদের রাজনীতি কখনোই গণমুখী নয়, তারা চায় জনগণ যেন বিভ্রান্ত থাকে, দাঙ্গা-হাঙ্গামা চলুক, যাতে তারা সুযোগ নিতে পারে। আওয়ামী লীগ চায় সারা দেশ হোক “আমার নেত্রীই সব”; বিএনপি চায় “ক্ষমতা ফেরত দাও”, জামায়াত চায় “ইসলামের নামে পাকিস্তানি ভাবাদর্শ ফিরিয়ে আনো”।

সমাধান কোথায়?

সমাধান একটাই—সচেতন নাগরিক সমাজ। আমাদের দরকার এমন নেতৃত্ব, যাদের হাতে নেই হত্যা, যারা ভোটে বিশ্বাস করে, যারা রাজনীতিকে দেশসেবার পথ মনে করে। আর আমাদের, জনগণের, উচিত একে অপরকে দোষারোপ না করে এসব দুর্নীতিপরায়ণ দলের বাইরে বিকল্প খুঁজে বের করা।

গণতন্ত্র কেবল ব্যালটের মাধ্যমে সম্ভব, কিন্তু ব্যালটে ভোট দিলে যে গোনে, তাকে যদি বিশ্বাস করা না যায়—তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ ক্রমেই অন্ধকার।

Share: Facebook Twitter Linkedin
Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *