July 15, 2025

Banner Image

বিচিন্তা

পাশ্চাত্য কালচার নিয়ে বাংলাদেশের ধর্মান্ধদের ভুল ধারণা: বাস্তবতা বনাম বিভ্রান্তি

বাংলাদেশে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি (Western culture) নিয়ে নানা রকম ভুল ধারণা ও অমূলক ভয় অনেক ধর্মান্ধ বা গোঁড়া মানুষের মধ্যে প্রচলিত। এসব ধারণা অনেক সময় অজ্ঞতা, একচোখা দৃষ্টিভঙ্গি এবং তথ্যের অভাব থেকে জন্ম নেয়। এই লেখায় আমরা সেইসব ভুল ধারণাগুলো খতিয়ে দেখব এবং সেগুলোর বিপরীতে বাস্তবতা তুলে ধরার চেষ্টা করব।

১. ভুল ধারণা: পাশ্চাত্য কালচার মানেই অশ্লীলতা ও ধর্মহীনতা

অনেকেই মনে করেন পাশ্চাত্য সংস্কৃতি শুধু নৈতিক অবক্ষয়, নগ্নতা আর ধর্মহীনতাকে উৎসাহ দেয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পাশ্চাত্য দেশগুলোতে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমেরিকা ও ইউরোপের অধিকাংশ দেশে গির্জা, মসজিদ, মন্দির—সব ধর্মীয় উপাসনালয় অবাধভাবে চালু রয়েছে। সেখানে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসারও লক্ষণীয়, যেমন—ইসলামিক সেন্টার, হালাল খাবার, রমজানে বিশেষ আয়োজন ইত্যাদি।

👉 বাস্তবতা: পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় সহনশীলতার মূল্য অনেক বেশি।

২. ভুল ধারণা: পাশ্চাত্য সংস্কৃতি গ্রহণ মানেই নিজের ধর্ম বা সংস্কৃতির প্রতি অবজ্ঞা

এই ধারণাটিও একেবারে ভুল। কেউ পাশ্চাত্যের পোশাক পরলে বা ইংরেজি গান শুনলে তাকে ‘নাস্তিক’ বা ‘ধর্মত্যাগী’ হিসেবে দেখা অনেক বড় কুসংস্কার। সংস্কৃতি গ্রহণ ও ধর্ম পালন দুইটি আলাদা জিনিস। একজন মুসলিমও পাশ্চাত্য শিক্ষা, পোশাক বা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে, ধর্মীয় অনুশাসন বজায় রেখেই।

👉 বাস্তবতা: বিশ্বায়নের যুগে সংস্কৃতির আদান-প্রদান একটি স্বাভাবিক বিষয় এবং তা ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে নষ্ট করে না।


৩. ভুল ধারণা: পাশ্চাত্য কালচারে পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে গেছে

অন্য একটি প্রচলিত মিথ হলো, পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে নাকি পরিবার বা পারিবারিক মূল্যবোধ নেই। অথচ সত্যি হলো, সেখানে পারিবারিক অধিকার, শিশুদের মানসিক বিকাশ, নারী-পুরুষের সমান অধিকার, বৃদ্ধদের যত্ন—এসব বিষয়ে সমাজ অনেক বেশি সচেতন ও কাঠামোগতভাবে সংগঠিত।

👉 বাস্তবতা: পারিবারিক সম্পর্ক হয়তো আমাদের মতো দৃশ্যমান নয়, তবে সামাজিক নিরাপত্তা ও সহানুভূতির জায়গা অনেক বেশি দৃঢ়।


৪. ভুল ধারণা: পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ইসলামবিরোধী

অনেক গোঁড়া মানুষ মনে করেন পশ্চিমা দেশগুলো ইসলামবিদ্বেষী। যদিও কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দল ইসলামকে ভুলভাবে তুলে ধরেছে, কিন্তু পুরো পাশ্চাত্য বিশ্বকে ইসলামবিরোধী বলাটা অযৌক্তিক। ইউরোপের অনেক শহরে ইসলামী ব্যাংকিং, হিজাব পরিধান, ইসলামিক স্কুল—সবই বৈধ ও সহনীয়।

👉 বাস্তবতা: পাশ্চাত্য বিশ্বে ইসলামের শান্তিপূর্ণ প্রচারকরা ব্যাপক সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন (যেমন: মালালা ইউসুফজাই, হামজা ইউসুফ ইত্যাদি)।


৫. ভুল ধারণা: পাশ্চাত্য সংস্কৃতি কেবল পশ্চিমাদের জন্য, আমাদের নয়

এই ধরনের বিভ্রান্তি আমাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে। প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, চিকিৎসা—সব কিছুতেই পাশ্চাত্য গবেষণা ও সংস্কৃতির অবদান রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত যার উপর নির্ভর করি (মোবাইল, ইন্টারনেট, মেডিসিন), তার পেছনে রয়েছে পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ।

👉 বাস্তবতা: উন্নতির জন্য ভালো কিছু গ্রহণে দ্বিধা নেই। সংস্কৃতি গ্রহণ মানেই আত্মবিক্রয় নয়, বরং নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়।

পাশ্চাত্য সংস্কৃতি মানেই ধর্মহীনতা, অশ্লীলতা বা পারিবারিক ধস—এই ধারণাগুলো গোঁড়ামি, অজ্ঞতা ও অপরিচয়ের ফল। আসলে, পাশ্চাত্য সমাজে আছে উদারতা, মানবতা, যুক্তিবাদ, ও স্বাধীনতার চর্চা—যা ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গেও অনেকাংশে মিল খায়। আমাদের প্রয়োজন একচোখা দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে বাস্তবতা বোঝা এবং ভালো-মন্দ বিচার করে গ্রহণ বা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া।

Share: Facebook Twitter Linkedin
Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *