ডমেস্টিক ভায়োলেন্স কী?
ডমেস্টিক ভায়োলেন্স বলতে পারিবারিক পরিসরে সংঘটিত যে কোনো ধরণের নির্যাতন বোঝায়—শারীরিক, মানসিক, যৌন, আর্থিক কিংবা ডিজিটাল সহিংসতা—যা সাধারণত একজন পরিবারের সদস্য অপর সদস্যের ওপর প্রয়োগ করে।
বাংলাদেশে ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের পরিসংখ্যান
বাংলাদেশে গার্হস্থ্য সহিংসতা একটি উদ্বেগজনক সমস্যা। বিভিন্ন গবেষণা ও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নীচের তথ্যগুলো:
- বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস (BBS) ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী:
বিবাহিত নারীদের প্রায় ৭২.৬% জীবনের কোনো না কোনো সময়ে স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। - ব্র্যাকের ২০২০ সালের এক জরিপে দেখা গেছে:
করোনাকালীন সময়ে গার্হস্থ্য সহিংসতার হার ৬৯% বৃদ্ধি পেয়েছে। - Ain o Salish Kendra (ASK)–এর তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে শুধু সংবাদপত্রের ভিত্তিতে রিপোর্ট হওয়া নারী নির্যাতনের ঘটনা ছিল ১,৩৭৫টি, যার মধ্যে অনেক ঘটনাই ছিল ডমেস্টিক ভায়োলেন্স।
আইনি কাঠামো ও প্রতিরক্ষা
বাংলাদেশে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স রোধে আইনগত ব্যবস্থাও রয়েছে:
✅ “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০”
- ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন ও যৌতুক সংক্রান্ত সহিংসতার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
✅ “ডমেস্টিক ভায়োলেন্স (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০”
- এ আইনে মানসিক, শারীরিক, যৌন এবং আর্থিক নির্যাতনকে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
- ভুক্তভোগী নারীরা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে গিয়ে “সুরক্ষা আদেশ” পেতে পারেন।
✅ জেন্ডার সেল, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়
- নির্যাতনের শিকার নারীদের সহায়তা ও পুনর্বাসনে কাজ করে।
সমাজের মনোভাব ও প্রতিবন্ধকতা
বাংলাদেশে এখনো অনেক মানুষ ডমেস্টিক ভায়োলেন্সকে “পারিবারিক বিষয়” বলে চুপ থাকেন। সামাজিক লজ্জা, আর্থিক নির্ভরতা, সন্তানদের ভবিষ্যৎ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বল প্রতিক্রিয়া—এসব কারণে নির্যাতিতরা ন্যায়বিচার পান না।
সহায়তার মাধ্যম
- ১০৯: জাতীয় সহায়তা হেল্পলাইন (২৪/৭ চালু)
- BRAC, ASK, BNWLA প্রভৃতি এনজিও প্রতিষ্ঠান সহায়তা প্রদান করে থাকে।
- নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র ও সেফ শেল্টার-এ আশ্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
করণীয় ও সুপারিশ
- সচেতনতা বৃদ্ধি: স্কুল, কলেজ ও কমিউনিটি পর্যায়ে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে।
- নারীর আর্থিক স্বাধীনতা: অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলে নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সহজ হয়।
- আইন প্রয়োগে স্বচ্ছতা: পুলিশের ভূমিকাকে জবাবদিহিমূলক করতে হবে।
- সামাজিক নিরাপত্তা জাল বিস্তার: সাইকোসোশিয়াল কেয়ার, লিগ্যাল এইড ও হেল্পলাইন আরও বিস্তৃত করতে হবে।
ডমেস্টিক ভায়োলেন্স কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি একটি সামাজিক অপরাধ। এর বিরুদ্ধে শুধু আইন নয়, দরকার সামাজিক সচেতনতা, শিক্ষা, এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ। আমরা যদি এই সমস্যাটিকে লুকিয়ে রাখি, তাহলে এটি আরও গভীর হয়। এখনই সময় কথা বলার, সাহসী হওয়ার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।