July 15, 2025

Banner Image

বিচিন্তা

বাংলাদেশ কেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবে: একটি পর্যালোচনা

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত রাষ্ট্র ও সমাজের গঠন মূলত ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে আসছে। বাংলাদেশ একটি বহু-ধর্মীয়, বহু-সাংস্কৃতিক জাতি। এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ নানা ধর্মের মানুষের বসবাস। তাই ধর্মনিরপেক্ষতা শুধুমাত্র আইনগত বা রাজনৈতিক ধারণা নয়, বরং একটি সমাজিক বাস্তবতাও বটে। এই ব্লগে আমি পর্যালোচনা করব কেন বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবে এবং হওয়া উচিত।

১. রাষ্ট্রের সংবিধানগত ভিত্তি

বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে — “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” থাকলেও রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ প্রভিশন রাখা হয়েছে। ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়। সংবিধানের ১২তম সংশোধনী প্রমাণ করে, বাংলাদেশ তার ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় বজায় রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মের ওপর রাষ্ট্রের কোনো প্রভাব বা আধিপত্য থাকবে না, যার ফলে সকল ধর্মের মানুষ সমান মর্যাদা পাবে।

২. বহু-ধর্মীয় সমাজ কাঠামো

বাংলাদেশের জনসংখ্যা বহু ধর্মের মানুষের সমন্বয়ে গঠিত। মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও উল্লেখযোগ্য। ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া এ জাতীয় বৈচিত্র্য আর সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখা অসম্ভব। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ সমাজে সহনশীলতা, সাম্যবাদ ও একতা বজায় রাখতে পারবে, যা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।

৩. মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও ইতিহাস

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ধর্মনিরপেক্ষতার এক প্রবাদপ্রতিম আদর্শের প্রতিফলন। স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধটা ছিল শোষণ, অবিচার ও ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের সংবিধানও সেই আদর্শের ধারাবাহিক। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও শিক্ষা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারণ।

৪. আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও উন্নয়ন মান

আধুনিক বিশ্বে ধর্মনিরপেক্ষতা একটি উন্নত ও মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সূচক। বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নশীল দেশের দিকেই এগোচ্ছে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে আরো কার্যকরভাবে সমন্বয় করতে পারবে এবং উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হবে।

৫. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি

ধর্মীয় বিভাজন রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা ধর্মীয় বিদ্বেষ দূর করে, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ কমায় এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশে নানা সময়ে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও ধর্মনিরপেক্ষ নীতির কারণে সরকার ও জনগণ এগুলো প্রতিরোধে সচেষ্ট। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা অপরিহার্য।

বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবে কারণ তা দেশের সাংবিধানিক, সামাজিক ও ঐতিহাসিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ধর্মনিরপেক্ষতা নিশ্চিত করেই বাংলাদেশ জাতীয় ঐক্য, সামাজিক শান্তি এবং উন্নয়নের সোপান অতিক্রম করবে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থাই হবে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও শান্তির মূল ভিত্তি।

Share: Facebook Twitter Linkedin
Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *