July 15, 2025

Banner Image

বিচিন্তা

ধর্মীয় গোড়ামী ও বাংলাদেশ: আমাদের পথচলায় বাধা নাকি প্রেরণা?

বাংলাদেশ একটি ধর্মপ্রাণ দেশ, যেখানে মানুষের জীবনধারার সঙ্গে ধর্মের মেলবন্ধন সুদীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ নানা ধর্মের মানুষ এখানে যুগ যুগ ধরে সহাবস্থান করে আসছে। তবে, এই ধর্মীয় বৈচিত্র্য আর বিশ্বাসের মাঝেও কখনো কখনো দেখা যায় ধর্মীয় গোড়ামীর করাল ছায়া—যা শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে পারে।

ধর্মীয় গোড়ামী কী?

ধর্মীয় গোড়ামী বলতে বোঝায় একটি ধর্ম বা মতবাদকে শ্রেষ্ঠ ও একমাত্র সত্য বিবেচনা করে অন্য ধর্ম বা মতবাদকে অবজ্ঞা বা ঘৃণা করা। এটি সাধারণত অন্ধ বিশ্বাস, অশিক্ষা, এবং সংকীর্ণ মনোভাব থেকে জন্ম নেয়। এই মানসিকতা ব্যক্তি ও সমাজকে সহনশীলতা থেকে বিচ্যুত করে, জন্ম দেয় বিদ্বেষ ও সহিংসতার।

বাংলাদেশে ধর্মীয় গোড়ামীর চিত্র

বাংলাদেশের সমাজে ধর্মীয় অনুভূতি অত্যন্ত শক্তিশালী। তবে সমস্যা তখনই দেখা দেয়, যখন ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিকে জোর করে আরোপ করা হয়। সময়বিশেষে আমরা লক্ষ্য করি, কার্টুন আঁকার অপরাধে হত্যাকাণ্ড, ভিন্নমতের মানুষদের হেনস্থা, অথবা সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ—এসবই ধর্মীয় গোড়ামীর চরম রূপ।

শুধু তাই নয়, অনেক সময় ধর্মের নামে নারীদের অধিকার খর্ব করা, শিশুদের ওপর জোরপূর্বক ধর্মীয় শিক্ষা চাপিয়ে দেওয়া, এমনকি চিকিৎসার মতো মৌলিক বিষয়ের ক্ষেত্রেও ধর্মীয় গোঁড়ামি বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

এর ফলে কী হচ্ছে?

ধর্মীয় গোড়ামীর ফলে সৃষ্টি হয় ভয়, হিংসা ও বিভাজন। একটি সমাজ তখনই এগোয় যখন সেখানে থাকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা। কিন্তু ধর্মীয় গোড়ামী এই মূল্যবোধগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। তরুণ প্রজন্মকে প্রশ্ন করা ও যুক্তির পথে হাঁটতে নিরুৎসাহিত করা হয়। ফলে, তারা হয়ে পড়ে চিন্তাহীন এবং নিষ্ক্রিয়।

সমাধান কী?

মানসিকতার পরিবর্তন: আমাদের জানতে হবে, ধর্ম একান্তই ব্যক্তিগত একটি বিষয়। অন্যের বিশ্বাসকে অসম্মান না করে, নিজের বিশ্বাসকে মর্যাদা দেওয়া সম্ভব।

শিক্ষা: বিজ্ঞানভিত্তিক ও মানবিক শিক্ষা ধর্মীয় গোড়ামীর সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক। তরুণ প্রজন্মকে বিশ্লেষণধর্মী ও মুক্তচিন্তার শিক্ষা দিতে হবে।

সংলাপ ও সহাবস্থান: ভিন্ন ধর্ম ও মতের মানুষের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপের মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি দূর করা যায়। একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

আইনের সঠিক প্রয়োগ: যারা ধর্মের অপব্যবহার করে সহিংসতা বা ঘৃণা ছড়ায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ধর্ম আমাদের মানসিক শক্তি ও নৈতিকতার ভিত্তি হতে পারে, যদি আমরা তা মানবিকতার আলোকে গ্রহণ করি। কিন্তু ধর্মীয় গোড়ামী সেই ধর্মকেই কলুষিত করে তোলে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত, শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে গোড়ামীর বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে—অন্তত নিজের চিন্তায়, কথায় ও আচরণে।

Share: Facebook Twitter Linkedin
Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *