বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্যজোটের নেতাকর্মীদের উপর মৌলবাদীদের হামলার ঘটনা দীর্ঘদিন ধরেই চলমান। এই হামলাগুলো ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য হামলার ঘটনা তুলে ধরা হলো:
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর মৌলবাদী হামলার চিত্র
1. হাজারী গলি সহিংসতা (নভেম্বর ২০২৪, চট্টগ্রাম)
হাজারী গলিতে একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ঘটে। পোস্টটি ইস্কনকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে উল্লেখ করেছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় মুসলিম ব্যবসায়ীর দোকানে হামলা চালায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে তাদের উপরও হামলা হয়, যার ফলে ১২ জন আহত হন। এই ঘটনায় ৮০ জনকে আটক করা হয়, যার মধ্যে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
2. নাসিরনগর সহিংসতা (অক্টোবর ২০১৬, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
ফেসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগে নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক হামলা চালানো হয়। এই সহিংসতায় ১৯টি মন্দির ও প্রায় ৩০০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়, এবং ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন।
3. রামু সহিংসতা (সেপ্টেম্বর ২০১২, কক্সবাজার)
ফেসবুকে কোরআন অবমাননার অভিযোগে রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা চালানো হয়। ২৪টি বৌদ্ধ মন্দির ও ৭৫টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এই সহিংসতায় প্রায় ২৫,০০০ জন অংশগ্রহণ করেছিল এবং ৩০০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।
4. সুনামগঞ্জ সহিংসতা (মার্চ ২০২১, সুনামগঞ্জ)
ফেসবুকে ইসলামি পণ্ডিত মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগে সুনামগঞ্জের নোয়াগাঁও গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়। এই ঘটনায় ৮৮টি বাড়ি ও ৭-৮টি মন্দির ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এই হামলার নেতৃত্ব দেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা শাহিদুল ইসলাম স্বাধীন। এখন পর্যন্ত ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
5. হাথাজারী সহিংসতা (ফেব্রুয়ারি ২০১২, চট্টগ্রাম)
হাথাজারীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ১৪টি মন্দিরে হামলা ও লুটপাট করা হয়। এই ঘটনায় ৮০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঐক্যজোটের প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যজোট (BHBCOP) এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে। তারা বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করেছে। তাছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলোও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বাংলাদেশের সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি। এই ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতা প্রচারের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন সম্ভব।