বাংলাদেশের সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ড ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে ঘটে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডটি বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সমাজে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং এখনও পর্যন্ত এর সঠিক তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
হত্যাকাণ্ডের পটভূমি ও তদন্তের অগ্রগতি
সাগর সারোয়ার মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক এবং মেহেরুন রুনি এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাদের হত্যাকাণ্ডের পরপরই পুলিশ ও র্যাব তদন্ত শুরু করে, তবে প্রাথমিকভাবে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে মামলাটি র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে তদন্তে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় ২০২৪ সালে হাইকোর্ট একটি টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেয়। এই টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডে দুইজন অংশ নিয়েছে এবং ঘটনাস্থলে চারজনের ডিএনএ পাওয়া গেছে, তবে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
হত্যার সম্ভাব্য কারণ ও ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব
তদন্তে উঠে এসেছে যে, হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং যারা এই হত্যায় জড়িত তারা সাগর ও রুনির ব্যক্তিগত জীবন বা পেশাগত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানত। তবে হত্যার প্রকৃত কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। কিছু সূত্রে জানা গেছে যে, সাগর ও রুনি তাদের প্রতিবেদনে শক্তিশালী কর্পোরেট বা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রকাশ করেছিলেন, যা তাদের হত্যার কারণ হতে পারে।
রাঘব বোয়ালদের ভূমিকা ও তদন্তে প্রতিবন্ধকতা
গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সাগর ও রুনি তাদের প্রতিবেদনে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরেছিলেন যা ক্ষমতাশালী মহলের অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তাদের হত্যাকাণ্ডের পর তদন্তে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে, যেমন:
- ঘটনাস্থলে প্রাথমিকভাবে পুলিশের উপস্থিতি বিলম্বিত হওয়া, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট হয়।
- ডিএনএ নমুনা বিশ্লেষণে অস্পষ্টতা, যা তদন্তের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করেছে।
- সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বারবার তদন্তের গতি বাড়ানোর দাবি জানানো হলেও, কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এই সকল বিষয় ইঙ্গিত দেয় যে, হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোনো শক্তিশালী মহলের হাত থাকতে পারে, যারা তদন্তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রভাব ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
সাগর ও রুনির হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইউনেস্কোসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। জার্মানিতে বাংলাদেশি অভিবাসীরা এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যতদিন পর্যন্ত এই হত্যার সঠিক বিচার না হবে, ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সমাজে ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম চলতে থাকবে।
Source: https://www.prothomalo.com/